প্রায় এক বছর তদন্ত করে এ ঘটনার সত্যতা পেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।‘১ কোটি ২৮ লাখ তো নিছেন আপনারা সবাই। আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে ১৪ লাখ দিছি না?’ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই টেলিফোন কথোপকথনের সত্যতা পাওয়া গেছে। ঘুষ লেনদেনের এই ঘটনা ঘটেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এক কর্মকর্তা এবং গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক কর্মকর্তার মধ্যে। ওই টেলিফোন আলাপচারিতায় ছিলেন বর্তমানে সিআইডির চাকরিচ্যুত উপপরিদর্শক (এসআই) আকসাদুদ জামানের স্ত্রী তাহমিনা ইয়াসমিন এবং ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) কায়সার রিজভী কোরায়েশি।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ডিবির অভিযুক্ত সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী সাবেক এসআই আকসাদুদ জামানও তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে পারবেন। এ ছাড়া অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
যেভাবে মুক্তিপণ আদায় করা হলো-
২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের কবলে পড়েন দুবাইপ্রবাসী রোমান মিয়া। ফুফাতো ভাই মো. মনির হোসেনকে নিয়ে তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে যাচ্ছিলেন। কাওলা পদচারী–সেতুর কাছে মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল দিয়ে তাঁদের পথ আটকানো হয়। মনিরকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে ডিবি পরিচয় দিয়ে রোমান মিয়াকে মাইক্রোবাসে তুলে নেন দুর্বৃত্তরা। তাঁর হাতে হাতকড়া লাগিয়ে চোখ বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। একপর্যায়ে তাঁর কাছ থেকে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার ও দুই হাজার দিরহাম (সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুদ্রা) ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে রামপুরা এলাকায় ফেলে যান দুর্বৃত্তরা। পরদিন এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন রোমান। ওই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবি। মামলার তদন্ত–তদারক কর্মকর্তা ছিলেন এডিসি কায়সার রিজভী কোরায়েশি।
ডিবি সূত্র বলছে, তদন্তে প্রবাসী রোমান মিয়াকে রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া ও ডাকাতির ঘটনায় এসআই আকসাদুদ জামানসহ নয়জন জড়িত থাকার তথ্য–প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত ডিবির সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আইনের লঙ্ঘন হবে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কায়সার রিজভীসহ সাত পুলিশ সদস্য ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। ফৌজদারি আইনে সবাই সমান অপরাধী।