সংগীতশিল্পী প্রীতম হাসান আর অভিনেত্রী, গায়িকা শেহতাজ মনিরা হাশেমের মধ্যে যে প্রেম চলছে, বিয়ের আগে আঁচই করতে পারেনি মিডিয়া। ঢাকা থেকে দূরে পাহাড় আর চা–পাতায় ঘেরা শহর শ্রীমঙ্গলে গত ২৯ অক্টোবর বসেছিল এ দুই তারকার বিয়ের আসর। তাঁদের ডেস্টিনেশন বিয়ের গল্প শুনলেন বিপাশা রায়
‘শুরু থেকেই আমাদের ডেস্টিনেশন ওয়েডিং করার ইচ্ছা। প্রথম পছন্দ ছিল ব্যাংকক। কিন্তু আগস্টে হঠাৎ করে আমার আব্বু মারা যায়। তখন দেশের বাইরে গিয়ে বিয়ের আয়োজন করার ইচ্ছা মরে যায়। দেশের মধ্যেই কোথাও গিয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই,’ বলছিলেন শেহতাজ মনিরা হাশেম। গত বছরের ২৯ অক্টোবর সংগীত পরিচালক ও সংগীতশিল্পী প্রীতম হাসানকে বিয়ে করেছেন এই অভিনেত্রী, মডেল ও সংগীতশিল্পী। শ্রীমঙ্গলের পাঁচ তারকা হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফে হয় অনুষ্ঠান। বিয়ের ছবি ফেসবুকে প্রকাশের পরপর দারুণ আলোচনায় আসেন শেহতাজ-প্রীতম। বিভিন্ন অঙ্গনের তারকাদের উপস্থিতি সেই বিয়েকে দেয় ভিন্নমাত্রা।
শেহতাজ-প্রীতমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ভেন্যু হিসেবে যখন ব্যাংকক বাতিল হলো, তখন তাঁরা ভেবেছিলেন সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে বিয়ে করবেন। কক্সবাজার তাঁদের বিশেষভাবে পছন্দ। কিন্তু সমুদ্রের বালুতে অতিথিদের কীভাবে আপ্যায়ন করবেন, এসব সাতপাঁচ ভেবে পিছিয়ে যান। ঢাকা-কক্সবাজার দূরত্বও একটা বিষয় ছিল। সেই ভাবনা থেকে বিয়ের ভেন্যু বদলে যায়। নতুন গন্তব্য হয় শ্রীমঙ্গল। ভেন্যু হিসেবে চূড়ান্ত হয় গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ।
ভেন্যু তো ঠিক হলো, এবার বাড়ির মুরব্বিদের রাজি করাতে হবে। শেহতাজ বলেন, ‘দূরে গিয়ে বিয়ের এই সংস্কৃতির সঙ্গে অনেক মুরব্বি আত্মীয়ই পরিচিত না। যে কারণে তাঁদের বোঝানোটা বেশ কষ্টকর ছিল।’
শেহতাজের মায়ের দুশ্চিন্তা আবার অন্য জায়গায়। এত আত্মীয়স্বজন, তার মধ্য থেকে নির্দিষ্ট কিছু আত্মীয়কে নিয়ে আয়োজন করলে লোকে কী ভাববে! তবে সব দিক সামলে শেষ পর্যন্ত মেয়ের ইচ্ছার কাছেই হার মানলেন মা। প্রীতম যোগ করলেন, ‘আসলে দুই পরিবারে একেবারেই যারা খুব কাছের মানুষ, প্রাণের মানুষ, শুধু তাদের নিয়ে বিশেষ দিনটি কাটাতে চেয়েছি আমরা। চেয়েছি একেবারেই নিজেদের মতো করে এই মুহূর্ত উদ্যাপন করতে।’
সঙ্গে শেহতাজ যোগ করলেন, ‘বিয়েতে হাজার মানুষ নিয়ে জমকালো আয়োজন কখনোই আমাকে টানে না। কোথায় জানি বর-কনের আনন্দটা হারিয়ে যায়। সবাই ব্যস্ত থাকে অতিথি আপ্যায়ন আর আয়োজন নিয়ে। বিয়ের আয়োজন হবে একেবারেই সাধারণ, কিন্তু তার মধ্যেও একধরনের রুচিবোধ থাকবে। মানে অ্যাসথেটিক্যালি সিম্পল বিষয়টিকে আমরা প্রাধান্য দিতে চেয়েছি। খেয়াল করে দেখবেন, বিয়ের ডেকোরেশন থেকে আমাদের সাজপোশাক—কোনোকিছুই খুব জাঁকালো ছিল না। চোখের শান্তি দেওয়ার একটা ব্যাপার ছিল।’
শেহতাজ নিজেই তাঁদের দুজনের বিয়ের পোশাকের নকশা করেছিলেন। বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট পোশাক পরার বাধ্যবাধকতা ছিল না, খালি পোশাকের রং নির্ধারণ করে দেওয়া ছিল। তাই প্রীতম-শেহতাজের বিয়েতে আসা অতিথিদের প্রায় প্রত্যেককেই প্যাস্টেল কালারের পোশাক পরতে দেখা যায়।
২৯ অক্টোবর তাঁদের আক্দের সময় ছিল দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা। সকাল ১০টার দিকেই চলে আসেন আলোকচিত্রী। শেহতাজ বলেন, ‘তাই আলাদা করে কনে সাজের জন্য খুব একটা সময় পাইনি। খুব ইচ্ছা ছিল সুন্দর করে চুল বাঁধার। সময় কম হওয়ার কারণে আর সম্ভব হয়নি।’ শেষমেশ খোলা চুলেই বউসাজে মঞ্চে আসেন শেহতাজ।
রাতে ছিল গোছানো রিসেপশন পার্টি। সব কটি আয়োজন ছিল মনোমুগ্ধকর।
ব্যতিক্রমী এই আয়োজন অতিথিরা যে দারুণভাবে উপভোগ করেছেন, সেটা তাঁদের সে সময়ের ফেসবুক অ্যাকটিভিটিতেই বোঝা যায়। প্রীতম-শেহতাজের এই ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অভিনয় ও সংগীতজগতের অনেকেই। ছিলেন মুমতাহিনা টয়া, সৈয়দ শাওন, সুনেরাহ বিনতে কামাল, সাফা কবির, নুহাশ হুমায়ূন, হৃদি, জেফারসহ আরও অনেকে; যাঁরা প্রত্যেকেই শেহতাজ ও প্রীতমের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
আরেকটি মজার তথ্য দিলেন শেহতাজ। তাঁদের প্রেম–বিয়ে নিয়ে মিডিয়াতে তেমন কেউ কিছু জানতেন না। বিয়ের আগের দিন সন্ধ্যায় তেমন কোনো আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল না। হাতে মেহেদি পরতে পরতে হোটেল কক্ষের মধ্যেই ছোট করে হয়ে যায় মেহেদির আয়োজন। সেই সময় বন্ধুদের মধ্য থেকে কেউ কেউ হয়তো কিছু ছবি ফেসবুক স্টোরিতে দিয়েছিলেন। আরকি! মুহূর্তেই ভাইরাল শেহতাজ–প্রীতমের বিয়ে।